বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ’, ‘টিকিট কিনে খেলা দেখলে লটারিতে পুরস্কার’- সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের মূল ফটকের সামনে মাইক থেকে ভেসে আসছে এসব ঘোষণা। স্টেডিয়ামের ভেতরে সাউন্ডবক্সে বাজছে মমতাজের কণ্ঠে গাওয়া থিম সং ‘আয় দলে, আয় বলে’। শহরের রাস্তাজুড়ে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ সংবলিত পোস্টার এবং ব্যানার সাজানো। প্রচারণার কোনো কমতি নেই।
জাতির পিতার নামের এ টুর্নামেন্টেকে ঘিরে চায়ের নগরীখ্যাত সিলেট যেন এখন উৎসবের নগরী। জমকালো আয়োজনের জন্য প্রস্তুত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহরটি। প্রস্তুত অংশগ্রহণকারী ছয়টি দলও। ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমিখ্যাত সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে আজ শুরু ফুটবল-যুদ্ধ। সুরমা নদীর তীরবর্তী শহরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ-লাওস ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে গোল্ডকাপের পঞ্চম আসরের। আন্তর্জাতিক এ টুর্নামেন্টের সঙ্গে থাকছে হা-মীম গ্রুপ। টুর্নামেন্টের কো-স্পন্সর এ প্রতিষ্ঠানটি। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের স্বত্বাধিকারী কে-স্পোর্টস।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে প্রথম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। দুই বছর পর আবারও ঢাকায় বসেছিল এ টুর্নামেন্ট। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ক্যালেন্ডার থেকেই হারিয়ে যায় গোল্ডকাপ। জাতির পিতার নামের টুর্নামেন্টের তৃতীয় আসরটি হয়েছিল ১৬ বছর পর ২০১৫ সালে। নিয়ম করে পরের বছরও অনুষ্ঠিত হয়েছিল গোল্ডকাপ। এরপর আবারও ছন্দপতন। গত বছর হয়নি। এবার নতুন আঙ্গিকে হচ্ছে গোল্ডকাপের পঞ্চম আসর। অতীতে জাতীয় দল অংশ নেয়নি। ব্যতিক্রম এবারই। ফিলিস্তিন, তাজিকিস্তান, নেপাল, ফিলিপাইন ও লাওস পাঠিয়েছে জাতীয় দল। কেউ কারও চেয়ে শক্তিতে কম নয়।
অনেকের চোখে ফেভারিট ফিলিস্তিন। তবে দলটির কোচ নূর উদ্দিনের মতে, কেউই ফেভারিট নয়। আবার স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশকে ফেভারিট মনে করেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দুঃখ ভুলে নতুন শুরুর প্রত্যয় তার। ফিলিপাইনও এখানে জিততে এসেছে। সব মিলিয়ে সেরা দলগুলোর মধ্যে জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষা।
সিলেটে ফুটবল মানেই দর্শকের জোয়ার। ২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট এশিয়ান গেমস উপলক্ষে নেপাল যুব দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচটি ছিল সিলেটে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেই ম্যাচ দেখার জন্য স্টেডিয়ামের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেছিল ফুটবলপ্রেমীরা। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেও দর্শকের স্রোত বয়েছিল দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত এ নগরীতে। এবারও সেই প্রত্যাশা আয়োজকদের। গ্রুপ পর্বের ছয়টি ম্যাচই হবে সিলেটে। ছয় দিনের জন্য সিলেট নগরী ফুটবল জ্বরে থাকবে। কিন্তু এই টুর্নামেন্টের জন্য অনেক দিন ধরেই প্রচারণা চালিয়ে আসছে আয়োজকরা। ৬ অক্টোবর সিলেট পর্ব শেষে ৯ ও ১০ অক্টোবর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে দুটি সেমিফাইনাল। ১২ অক্টোবর ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে শিরোপা নির্ধারণী লড়াই।
শেষ দিন পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকবে বাংলাদেশ? এই স্বপ্ন দেখছেন না ফুটবলবোদ্ধারা। গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে স্বপ্ন দেখিয়েও হতাশ করেছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। গ্রুপ পর্বে দুই ম্যাচ জিতেও নেপালের কাছে এক হারে সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ। ঘরের মাঠে আরেকটি বড় আসর। এবার তো প্রতিপক্ষরা র্যাংকিংয়ে যেমন অনেক এগিয়ে তেমনি কাগজে-কলমেও বেশ শক্তিশালী। বাস্তবিক চিন্তা থেকেই বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে শেষ চারকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছেন। লক্ষ্য পূরণের পথে আজ বাধা লাওস। নির্বাসন কাটিয়ে ফুটবলে ফেরা বাংলাদেশ গত মার্চে প্রীতি ফুটবল ম্যাচে এই লাওসের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করেছিল। আজ জিতলে সেমিফাইনালও অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। সেটা হলে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জৌলুসও বেড়ে যাবে। মরা ফুটবলে আবার ফিরে আসবে জোয়ার। এটাই তো চাওয়া কোটি বাঙালির।